,

আজ করগাঁও ইউপির প্রয়াত চেয়ারম্যান কুটিশ্বর দাশের ২২তম মৃত্যু বার্ষিকী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আজ নবীগঞ্জ উপজেলার ৭নং করগাঁও ইউনিয়নের প্রাক্তন চেয়ারম্যান, নবীগঞ্জ জে.কে হাইস্কুলের প্রাক্তন শিক্ষক ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক কুটিশ্বর দাশের ২২তম মৃত্যু বার্ষিকী। কুটিশ্বর দাশের জন্ম নবীগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী পরিবার মুক্তাহার গ্রামের “মাষ্টারবাড়ী” ১৯২৪ সালে। তাঁর পিতা বিশিষ্ট সমাজসেবক বাবু ভগবান দাশ ও মাতা সুরধনী দাশ। কুটিশ্বর দাশ ১৯৫১ সালে পারিবারিক আর্থিক প্রাচুর্য ও ব্যবসা-বানিজ্য থাকা সত্ত্বেও শিক্ষকতাকে ব্রত হিসেবে গ্রহন করে যোগদান করেন নবীগঞ্জ জে.কে হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক পদে। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে হক-ভাসানী- সোহরাওয়ার্দী-মুজিব এর নেতৃত্বে তিনি যুক্তফ্রন্টের পক্ষে তৃণমূলে ব্যাপক কাজ করেন। তাঁর ধী শক্তি, নিরপেক্ষতা, উদার মানসীকতা ও অসাম্প্রদায়িক কার্যক্রমে হয়ে ওঠেন ইউনিয়নের নিতিনির্ধারক। যেকোন বিবাদ ও সামাজিক সমস্যা স্বউদ্যোগেই নিরপেক্ষভাবে নিষ্পত্তি করতেন। যেকোন বিচারকার্যে বসলে রাত যত গভীর বা শেষ হোক না কেন নিষ্পওি না করে উঠতেন না। তাঁর নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এমন কেউ ছিল না। এমনকি তাঁর রায়ে বাদী-বিবাদী দুপক্ষই সন্তুষ্টি পেত। তাঁর ব্যক্তিত্বের বিশালতা এমন পর্যায়ে পৌছেছিল, যে কোন বিচারে প্রধান বিচারক বা সভাপতির আসন তাঁর জন্য নির্ধারিত ছিল। বৃদ্ধ বয়সেও রাত জেগে গ্রাম্য বিরোধ নিষ্পত্তি করতেন। গ্রাম্য সালিস-বৈঠকের কিংবদন্তি ব্যক্তিত্ব কুটিশ্বর বাবু ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিমুর্ত প্রতীক। হিন্দু-মুসলমানের ভাতৃত্ব প্রতিষ্টায় জীবন ভর কাজ করে গেছেন। কুটিশ্বর বাবু ১৯৬৭ সালে তৎকালীন নবীগঞ্জ থানার ৬নং করগাঁও (বর্তমানে ৭নং করগাঁও) ইউনিয়ন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। নবীগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের প্রথম কমিটির গঠিত হলে তিনি সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। একটি ইউনিয়নের প্রধান ব্যক্তি হিসেবে দীর্ঘ দিন অত্যন্ত সুনাম ও শ্রদ্ধার সাথে চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করেন জননেতা কুটিশ্বর দাশ। ১৯৬৯ সালে পূর্ব-বাংলা স্বাধীকারের চেতনায় জ্বলে উঠে। ১৯৭০ এর নির্বাচন ও ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর আবস্থানটাও ছিল অগ্রগণ্য। দায়িত্ব পালন করেন করগাঁও ইউনিয়ন সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক হিসেবে। যুদ্ধ শুরু হলে তিনি পরিবার পরিজনদের বালাটের কাঠাল বাড়ীতে রেখে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করেন। শরনার্থীদের খাদ্য, ঔষধসহ প্রয়োজনীয় মৌলিক চাহিদা পূরনে শুরু করেন রিলিপ কার্যক্রম। বালাটের ৩নং ক্যাম্পের সেক্রেটারীর দায়িত্ব পালনকালে শরনার্থীদের সমস্যাবলী সমাধানের পাশাপাশি যুবকদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করতে উদ্ভোদ্ধ করে তাদের রিক্রোট করেন মুক্তিযুদ্ধে। তাছাড়া তিনি মুক্তিযোদ্ধাদেরও নানাভাবে সহযোগীতা করেন। দেশ স্বাধীন হলে দেশে ফিরেই স্বগ্রামসহ ইউনিয়নের রাজকার ও দুর্বৃওদের কর্তৃক লুঠপাঠকৃত মালামাল ফেরত আনা ও উওেজিত পরিস্থিতি শান্ত করতে ভূমিকা রাখেন। যুদ্ধবিধস্ত গ্রাম-বাংলা পুনঃর্গঠনে ক্ষতিগ্রস্থদের ঘরবাড়ী নির্মানে সরকারি বরাদ্দ প্রদানের পাশাপাশি নিজস্বভাবেও সহযোগিতা করেন। কুটিশ্বর বাবু চিকিৎসক হিসেবেও ছিলেন কিংবদন্তিসম। ইউনিয়নের তৎকালীন সময়ে একমাত্র চিকিৎসক হিসেবে গরীব মানুষের ছিলেন শেষ ভরসাস্থল। গরীব রোগীদের বিনা পয়সায় ও অন্যদের নাম মাত্র মূল্যে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করেছিলেন। তিনি একজন পন্ডিতসম ব্যক্তিও ছিলেন। বাংলা, সংস্কৃত, ইংরেজী, দর্শন বিষয়ে ছিলেন পারদর্শী। বিভিন্ন গানও রচনা করেছেন তিনি। ১৯৯৫ সালের ৪ এপ্রিল প্রয়ান ঘটে কিংবদন্তি চিকিৎসক, নন্দিত জননেতা, শিক্ষাব্রতী শিক্ষক ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক কুটিশ্বর দাশের। তাঁর মৃত্যুর দীর্ঘ ১৬ বছর পর ২০১১ সালে নবীগঞ্জের উদীয়মান ছাত্রনেতা ও কলামিস্ট রতœদীপ দাস রাজুর উদ্যোগে গঠিত হয় “কুটিশ্বর দাশ স্মৃতি সাহিত্য পরিষদ”। সংগঠনটি তরুন সমাজের সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিকাশে কাজ করে যাচ্ছে।


     এই বিভাগের আরো খবর